আজ || সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
শিরোনাম :
  গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটানোর ঘটনায় ১৬ জনকে জেলহাজতে প্রেরণ       গোপালপুরে দারোগার মাথা ফাটিয়েছে সন্ত্রাসীরা; গ্রেফতার ১০       গোপালপুরে প্রধানমন্ত্রীর ফেয়ার প্রাইজের চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ       গোপালপুরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের পদত্যাগ       উত্তর টাঙ্গাইল নূরানী মাদরাসার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উদযাপন       গোপালপুরে নানা আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত       গোপালপুরে পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশু ও নারী নিহত       গোপালপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ অর্থ প্রদান       গোপালপুরে জাতীয় সংসদ সদস্য ছোট মনির সংবর্ধিত    
 


জীবন এলার্ম ঘড়ি

: লুৎফর হাসান :
ঘড়ির বাইরেও প্রতিটা মানুষেরই নিজস্ব এলার্মওয়ালা ঘড়ি আছে। যারটা কাজ করে সে সৌভাগ্যবান। যারটা কাজ করে না, সে দুর্ভাগা।
শৈশবের ঘড়িটার নাম মা অথবা আম্মা। কখনও কখনও বাবা অথবা আব্বাও। মা অথবা আম্মা নামের এলার্মের স্বর সুমিষ্ট। যেন কার্নিশে ছোট্ট একটা দোয়েল মিষ্টি করে গান গাইছে, গান গাইছে আর ডাকছে ‘ওঠো, আলো এসে গেছে, আর ঘুমিও না।’ তখন আরও একটু শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। মনে হয়, সুপ্রিয় দোয়েল তুমি আরেকবার গাও।
বাবা অথবা আব্বা নামের এলার্মের স্বর সিংহের মতো। সেটাকে গর্জন বলা যায়। একবার ডাকলেই উঠে যেতে হয়।
এই এলার্মের শব্দ বয়সভেদে পরিবর্তন হয়। হোস্টেলের এলার্ম ছিলো কেয়ারটেকার। সে এলার্মের স্বর বিভীষিকার মতো। একবার ডাকলেই আর রক্ষা নাই। বাবা অথবা আব্বার ডাক সিংহের মতো মনে হলেও কিছুটা মায়া ছিলো কোথায় যেন। হোস্টেলের কেয়ারটেকারের ডাকের মধ্যে কোনও মায়া ছিলো না। সে কিশোর বেলা।
প্রথম তারুণ্যে এসব এলার্মের প্রয়োজন থাকে না খুব বেশি। নিজের তাগিদে উঠে যেতে হয়। তখন সব কিছুই রঙিন থাকে। যত না ঘুমানো, তত বেশি ভালো থাকা। ব্যক্তিগত সুখের খোঁজ খবরের সেই শুরু। সে যৌবন ছুঁইছুঁই তপ্ত রোদের দিন।
তার আরও পরে ক্যাম্পাস জীবন। রুম ভরতি সে, আমি, তুই, তুমি আর আপনিরা। মিলেমিশে একাকার। প্রতিজন রুমমেট একজন করে বেরসিক এলার্মের ঘড়ি। না উঠে উপায় নেই। ক্লাসের সময়ও তো সেই সাত সকালেই।
জীবন পৌঁছে যায় একদিন রনাঙ্গনে। জীবিকার তাড়নার শুরুর বেলা। তখন আর এলার্মের প্রয়োজন পড়ে না। যেন যতটুকুন ঘুম, ততটাই ক্ষতি। বড় সময় মেপে চলা সে জীবনে।
একদিন প্রেম আসে। জীবন ঝুঁকে পড়ে অন্য কোথাও। নির্ভরতার নাম হয়ে যায় বেঁচে থাকা। স্বেচ্ছায় সে জীবনের দিকে ঢলে পড়তে ভালো লাগে। তখন ঘুমেরা স্বপ্নের চাদরে মোড়ানো থাকে। সকালেরা বন্দী থাকে তার হাতে, তাহার হাতে। মুঠোফোন থাকে কাতর অপেক্ষায়। সে ডেকে দিক। তার শাসন আসুক সেই শৈশবের দোয়েলের মতন। ‘ওঠো, না হলে কিন্তু সোজা এসে পানি ঢেলে দেবো, ওঠো, ওঠো।’ তখন আলসেমিরা পায় মাত্রা নতুন। ইচ্ছে করে আর কিছুক্ষণ থাকা হোক এরকম করে। আরেকবার ডেকে উঠুক সুপ্রিয় দোয়েল। যেমন করে ডাকতেন মা অথবা আম্মা যিনি।
জীবন চক্রের এই সব এলার্মের শব্দেরা স্মৃতি হয়ে যায় একদিন। একদিন মানুষ বড় একলা হয়ে যায়। এলার্ম বেজে না ওঠার পেছনে থাকে কঠিন বাস্তবতার সম্পৃক্ততা। বিকল ঘড়ির দিকে চেয়ে চেয়ে ঘুম আসে দীর্ঘ ছায়ায়। সকাল এসে যায়। সকাল রঙ হারায়। সকাল চলে যায় ধীর লয়ে। তবুও সহজে ঘুম আর ভাঙে না যেন।

লেখক : সঙ্গীত শিল্পী, কবি ও গীতিকার।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!